সভ্যতার ক্রমবিকাশ, শাসন ব্যবস্থার বিবর্তন এবং আধুনিক ধ্যান-ধারণার
মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেবার সার্বিক উদ্যোগ এবং বাস্তবায়নই
হলো সুশাসন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মূলে ছিল বৈষম্যহীন শোষণমুক্ত
স্বাধীন সার্বভৌম দেশ গড়ার প্রত্যয়। স্বাধীনতার সার্থকতা তখনই লাভ করবে যখন
রাষ্ট্র দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষার মত মৌলিক
চাহিদাগুলো পূরণের পর রাষ্ট্রের সসীম সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে
প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসবে। আর এ ধরণের
দর্শনকে সফল করার মূল হাতিয়ার হলো একটি অধিক সক্ষম জনকল্যানমুখী প্রশাসন
ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বর্তমান সরকারের
ভিশন-২০২১ এদেশের উন্নয়নে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা।
একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বর্তমান সরকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের
মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশ ও তথ্য প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের
লক্ষ্যে ‘রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করেছে। ধারবাহিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে
মধ্যমে আয়ের পর্যায় পেরিয়ে শান্তিপূর্ণ, সুখী-সমৃদ্ধ এক উন্নতে জনপদে পরিণত
করাই হবে ‘রূপকল্প-২০৪১’ এর প্রধান লক্ষ্য।
এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার ‘জনগণের দোরগোড়ায় সেবা’ পৌঁছে দেয়ার
মূলমন্ত্র নিয়ে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন নীতিমালা, পরিকল্পনা, ও
সিদ্ধান্তমসূহ দ্রুত ও সফলতার সাথে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাঠ প্রশাসনকে নতুন
আঙ্গিকে উপস্থাপনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের
গুরুত্ব অপরিসীম। চুয়াডাঙ্গা জেলা এবং জেলার বাইরে প্রত্যেকেই এই ওয়েব
পোর্টাল ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে ডিজিটাল সেবা স্বল্প সময়ে এবং সাশ্রয়ী
উপায়ে গ্রহণে করতে সক্ষম হবেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সরকারি সেবাকে
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে আমাদের এই প্রয়াস। এতে জেলা প্রশাসন
কর্তৃক প্রদত্ত সকল সেবা এবং সেবা গ্রহণের পদ্ধতি সহজে জানা যাবে।
জেলার তথ্য বাতায়নসহ জেলার অন্যান্য সরকারি দপ্তরের পোর্টাল, উপজেলা ও
ইউনিয়নের ওয়েব পোর্টালে জেলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও বিজ্ঞপ্তিসমূহ নিয়মিত
কার্যক্রমের তথ্যাদি ছাড়াও কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের বিবরণ
হালনাগাদকরণের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধিতেতে আরো নিবিড়ভাবে জেলা প্রশাসনের
সাথে জনগণের সম্পৃক্ততা সুদৃঢ় করা সম্ভব হবে।
জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিবরণসহ জেলা
পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারী দপ্তরসমূহের কার্যক্রম ও কাঠামো সম্পর্কে
প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এ কার্যালয়ের বিবেচ্য গুরুত্বপূর্ণ
তথ্য এবং বিজ্ঞপ্তিসমুহ নিয়মিত প্রকাশ ও হালনাগাদ করা হবে। পাশাপাশি যে কোন
অভিযোগ বা পরামর্শের জন্য সরাসরি এ তথ্য বাতায়ন (ওয়েব সাইট) ব্যবহার করা
যাবে যার মাধ্যমে মেইল-বক্সের সহায়তায় তা কর্তৃপক্ষের নজরে আনা যাবে।
প্রয়োজনে সরাসরি যে কোন কর্মকর্তাকে ই-মেইল করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা
যাবে। আমি আশা করি, এই ওয়েব পোর্টালটি জনগণের তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত
করতে যেমন তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, তেমনি তাদের সেবাপ্রাপ্তি হবে সহজতর ও
স্বল্প ব্যয়সাপেক্ষ। এই পোর্টালটি থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সরকারি ফর্ম
ডাউনলোড করা যাবে। জানা যাবে বিভিন্ন লাইসেন্স/পারমিট প্রাপ্তির
নিয়মাবলী/শর্তাবলী। এছাড়া জানা যাবে, কোন শাখা হতে কি কি সেবা কি
নিয়মে/পদ্ধতিতে এবং কত সময়ে প্রদান করা হয়, পাওয়া যাবে ইজারা
বিজ্ঞপ্তি/নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং বিভিন্ন নোটিশ/অফিস আদেশ ইত্যাদি। এছাড়া
সময়ের পরিসরে এই পোর্টালে আরো অনেক বিভাগের/দপ্তরের বিশেষতঃ উন্নয়নমূলক
কার্যক্রমের তথ্য সন্নিবেশন করা হচ্ছে। এর ফলে নাগরিকের বিভিন্ন সেবা
প্রাপ্তিই কেবল সহজতর হবে না, প্রশাসনের গতিশীলতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও
নিশ্চিত হবে। একবিংশ শতাব্দীর তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সমাজের সকল শ্রেণির
মানুষের কল্যাণে ওয়েব পোর্টালটি কার্যকরী ভূমিকা রাখেবে এ আমার দৃঢ়
বিশ্বাস।
এটি শুধু চুয়াডাঙ্গাবাসীকে ডিজিটাল যুগে প্রবেশের সুযোগ দিয়েই
গৌরবান্বিত করবে না, সেই সাথে বর্তমান সরকারের তথ্য অধিকার আইনের আওতায়
জানার অধিকারকে করবে সুপ্রতিষ্ঠিত- ফলে বাড়বে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও
জবাবদিহিতা। এই তথ্য বাতায়নটি চালু করার মূল উদ্দেশ্য দেশের উন্নয়ন
কার্যক্রমে সরকারের সাথে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। ২০২১ সালের মধ্যে
সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নপূরণের পাশাপাশি ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নের
পথে এই জেলার জনগণের সাথে হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাব আমরা, এগিয়ে যাবে দেশ
সুন্দর আগামীর দিকে, সেই প্রত্যাশায়...
ড. কিসিঞ্জার চাকমা